সময়ের পরিবর্তনে রঙিন বন্ধুত্বটাও একসময় ধূসর হয়ে যায়। আত্মার সম্পর্ক রুপ নেয় বিচ্ছেদে। তামিম সাকিবের মতো তারকারাও এর বাইরে নয়।একসময় হোটেলে রুম শেয়ার করতেন তারা। অথচ এখন একজনের সাথে আরেকজন কথা পর্যন্ত বলেন না। কিন্তু কি এমন হয়েছে তাদের মধ্যে? কেন আজ তারা দুই মেরুর বাসিন্দা?
সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পিছনে, একবার সাকিব আল হাসান পরিবারের অযুহাত দিয়েছিলেন।তবে কি তাদের বউরাই, দায়ী পুরো ঘটনার জন্য?
দেশের ক্রিকেট পাড়ায় বছর পাচেক ধরে চলা গুঞ্জন এখন আর গুঞ্জনে সীমাবদ্ধ নেই। তামিম - সাকিব দুই বন্ধুর দ্বন্দ্ব, এখন আর স্পর্শকাতর কোন বিষয় নয়।
এই নিয়ে আলোচনাটা শুরু করেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল পাপন। পরে অবশ্য গনমাধ্যমের সামনে অনেকটা ইনিয়ে বিনিয়ে বিষয়টা স্বীকারও করে নিয়েছেন তামিম।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, নেটিজেনরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরনো দুই বন্ধুর নানা অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি শেয়ার করে, প্রকাশ করছেন তাদের আফসোস ও বিস্ময়।
কেউ এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, দুই বন্ধুর মনোমালিন্যের শুরু কখন থেকে। তবে বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে, টানা দুই বছর ধরে তাদের কথা বলা বন্ধ।
এমনকি ড্রেসিংরুম, টিম হোটেল বা অন্য কোথাও একজন সতীর্থদের সাথে আড্ডায় বসলে, আরেকজন সেখান থেকে সরে যান অথবা সেই আড্ডা এড়িয়ে যান।
দুজনের ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করেছেন, বেশ কিছু ঘনিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক। তাদের মতে, তামিম সাকিব একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন।
তবে জানা গিয়েছে এগুলো খুবই ব্যক্তিগত পর্যায়ের অভিযোগ। অবশ্য নিকট অতীতে, দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েও, দুইজনের মধ্যে বেশকিছু মতবিরোধ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, অভিযোগগুলো শুনে কখনো মনে হয়নি, এসব কারনে দীর্ঘমেয়াদে, দুই সতীর্থ নিজেদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ করে দিবেন।
তাই ধারনা করা হয়, মনোমালিন্যের ঘটনাটা হয়তো তারা নিজেদের মধ্যেই রাখতে চান। তবে ক্রিকেট পাড়ায় তাদের স্ত্রীদের মধ্যে ঝামেলার একটা গুঞ্জন রয়েছে প্রকটভাবে।
যদিও এই দাবির পক্ষে তেমন কোন প্রমান নেই। অনেকেই বলেছেন, তাদের দুইজনের স্ত্রী একই অনুষ্ঠানে যাননা, কিংবা গেলেও নিজেদের মধ্যে কখনো কথা বলেননা।
সাকিব তামিম বাংলাদেশের বহু জয়ের মহানায়ক। এই দুইজনকে দেশের ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড় বলে দাবি করা হয়। অথচ তাদের মধ্যে এত ঝামেলা।
তাদের ব্যাক্তিগত সমস্যা দলের উপরেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। অবশ্য এ নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে এখনো সরাসরি গ্রুপিং এর কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু জুনিয়র প্লেয়ারদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাদের সবসময় একটা ভয়ে থাকতে হয়। কখন কোন সিনিয়র আবার রাগ করে বসেন।
তামিমের সাথে কেউ কথা বললে ,আড় দৃষ্টিতে দেখেন সাকিব। আবার সাকিবের সাথে কেউ বললে, তাকে একটু বাকা চোখেই দেখেন তামিম ইকবাল খান।
এমনকি গেল সাউথ আফ্রিকা সফরে, তামিমের সাথে কে কি কথা বলছে, তা শুনতে চাইতেন সাকিব। আবার সাকিবের সাথে কে কী কথা বলছে, তা শুনতে চাইতেন তামিম।
টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকেই বলেছেন, তারা দুইজন দলের সবচেয়ে প্রফেশনাল খেলোয়াড়। তাদের দ্বন্দ্ব মাঠের খেলায় প্রভাব ফেলেনা।
কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করে, কোচ টিমমেট সহ বাকীদের জন্যে। সাবেক কোচিং প্যানেলের একজন তাদের ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব বেশি পাত্তা পাননি।
বিসিবি একবার তাদের দুইজনকে একত্র করেছিল। সেখানে একজন কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও, আরেকজন পুরো বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, পুনরায় হাথুরেকে কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনার পেছনে কাজ করেছে, এই দুইজনের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করার মোটিভ।
সাকিবের সাথে হাথুরের সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল। তামিমের সাথে সম্পর্কটা একসময় খারাপ থাকলেও, এখন তামিম ইকবালের সাথেই সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ হাথুরে।
আশা করা যায়, সম্পর্কের জোর এবং নিজের হেড মাস্টারির প্রভাব খাটিয়ে, সাকিব-তামিমকে কিছুটা হলেও, এক সুতায় গাথতে পারবেন নতুন কোচ।