বিএনপি আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করছে। দলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যেই এ আয়োজন করতে চায় বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার এবং নির্বাচন ইস্যুতে রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি, বিশেষ করে বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগীয় শহরে সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এই সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা হবে বলে দলের লক্ষ্য।
বিএনপির নেতারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় জনগণের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে চাপ দিতে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া সমান্তরালে পরিচালিত হওয়া উচিত। নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা নিরসনে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্যদিকে, বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল জানান, রাজধানীতে তাদের সাম্প্রতিক র্যালিতে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থনের প্রমাণ। এই সফল র্যালির পরই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাংগঠনিক কাজগুলো আরও সুচারুরূপে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে, নতুন কিছু কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণ দলের জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করে নেতারা বলেন, এই সরকারকে বাইরে রেখে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। তাই বিএনপি সহায়ক শক্তি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা মনে করে, সরকারের সব কার্যক্রমের ফোকাস হওয়া উচিত নির্বাচন এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে রোডম্যাপ প্রদান করা উচিত।
বিএনপির কিছু নেতা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার তাগিদ দিয়েছেন। তারা বলেন, বিশেষ করে নির্বাচন এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে যেন কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি এবং জামায়াত যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছে। দলটি মনে করে, জামায়াতকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তাই জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির র্যালির মূল্যায়ন করা হয়। তারা মনে করেন, এই র্যালি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং দেশের জনগণ বিএনপির প্রতি সম্মান এবং সমর্থন দেখিয়েছে। তারা মনে করে, বর্তমান সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় র্যালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সম্প্রতি কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিএনপি নেতারা বলেন, এ ধরনের নিয়োগ সরকারের জন্য বিতর্ক তৈরি করেছে, যা ছাত্রসমাজসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করেন, সরকারকে অবশ্যই বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ এড়িয়ে চলা উচিত।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় থাকা জরুরি। এ কারণে ১৬ ডিসেম্বরের বড় কর্মসূচি দলটির জন্য জনগণের সমর্থন ও শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হতে পারে।