আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে পলাতক নেতাদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রেড নোটিশ জারি করতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। মঙ্গলবার এই চিঠি আইজিপিকে পাঠানো হয়, যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আইনি অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চিঠিতে বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে, ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান যে সরকার শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতক নেতাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ড. নজরুল জানান, সরকার এই নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) অবগত করেছে। তবে, তিনি দাবি করেন যে আওয়ামী লীগ আইসিসিতে যে অভিযোগ দাখিল করেছে তা প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব জনমত এবং দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি প্রচেষ্টা।
ড. নজরুল আরও বলেন, “এটি কোনো মামলা নয়, বরং এটি আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসে পাঠানো একটি পিটিশন মাত্র। সাধারণত এই ধরনের অভিযোগ যে কোনো ব্যক্তি দাখিল করতে পারে। কিন্তু এটি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশল।”
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হয়নি। তবে বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, এবং এসব তদন্তে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সময়ই আমরা বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি, যা দলটির বিভিন্ন নেতাকর্মীর সাথে অপরাধের যোগসূত্র প্রমাণ করে।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ব্যক্তি পর্যায়ের বিচার সম্পন্ন করার পরই সরকার চাইলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্বলতা নেই এবং তদন্ত প্যারালাললি চলছে, যদিও দল হিসেবে বিচারের জন্য কোনো পৃথক রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি।”
এই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থির করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করে পলাতক নেতাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ দেশের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির সঙ্গে এই ধরনের পদক্ষেপ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বিচার করতে হবে।