বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি রাজনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, শুধুমাত্র সংবিধানের কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই প্রকৃত অর্থে সংস্কার হয় না। তার ভাষায়, প্রকৃত সংস্কার হলো সেই পরিবর্তন, যা সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে। যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত একটি স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে।
তারেক রহমান বলেন, অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন, তবে বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে এসেছে। তার মতে, এমন সংস্কারই প্রয়োজন যা জনগণের দৈনন্দিন জীবনের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম হবে। তিনি এই সংস্কারের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে কথা বলেন, যেখানে বেকারত্ব দূর করা, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখেই বিএনপি তাদের ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাব জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
স্মরণসভায় প্রয়াত তরিকুল ইসলামের অবদানের কথাও স্মরণ করেন তারেক রহমান। তরিকুল ইসলাম সম্পর্কে তারেক বলেন, তিনি দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে, কারণ তিনি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন। তারেক রহমান বলেন, তরিকুল ইসলামের সাংগঠনিক দক্ষতা বিশেষ করে ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের আন্দোলনে অসাধারণভাবে প্রকাশ পায়। এই আন্দোলনগুলোতে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষের অধিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তৃণমূলের সঙ্গে তরিকুল ইসলামের নিবিড় সম্পর্ক ছিল, যা তার রাজনৈতিক জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে। আজকের স্মরণসভায় বিশাল জনসমাগম তার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসার নিদর্শন বহন করছে।
তারেক রহমান বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ একের পর এক ভোট ডাকাতি, ডামি ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের সাক্ষী হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এসব প্রক্রিয়ায় দেশ গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়েছে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক ইচ্ছাকে অবদমিত করেছে। তারেক রহমান স্মরণ করেন যে, ২০১৪ সালের আন্দোলনে তরিকুল ইসলাম কিভাবে নিজেকে জনগণের পক্ষে নিয়োজিত করেছিলেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের গণতন্ত্রের জন্য সংগঠিত করেছিলেন। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তরিকুল ইসলামের এই অবদানের সাক্ষী। গণতন্ত্রের প্রতি তার এ অবদান বিএনপির জন্য এক চিরস্মরণীয় উদাহরণ।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ড ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। তারা তরিকুল ইসলামের আদর্শ ও দেশপ্রেমের কথা স্মরণ করেন এবং তার অবদানকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।