বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে একটি আলোচিত মামলার আপিল শুনানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তিনি সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং আপিলের মাধ্যমে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার লক্ষ্যে আদালতে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুতির উদ্যোগ নিয়েছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এ পেপারবুক তৈরি করতে আদেশ প্রদান করেছেন।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) খালেদা জিয়াকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার অপর তিন আসামিও একই সাজা পেয়েছেন। মামলা চলাকালীন খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন এবং বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন, যার ফলে তার আইনজীবীরা আপিলের উদ্যোগ নেন।
মামলার আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপিল আদালতে মামলার প্রমাণ, দলিল এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা পেপারবুক প্রস্তুতের অনুমতি চেয়েছিলেন যাতে আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আদালতে পেশ করা যায়। আদালত আপিলকারীর খরচে এই পেপারবুক প্রস্তুতির অনুমতি দিয়েছেন। আইনজীবী কায়সার কামাল জানান, পেপারবুক তৈরি হয়ে গেলে আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা সহজ হবে।
মামলার আপিলের পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মতে, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা দণ্ড মওকুফের প্রস্তাব গ্রহণে তার অনীহা রয়েছে। আইনজীবীরা জানান, খালেদা জিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন এবং ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
আইনজীবীদের মতে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও আপিল শুনানি জরুরি, কারণ খালেদা জিয়া মনে করেন, ক্ষমা চাওয়ার চেয়ে নিজের পক্ষে আইনগত প্রমাণ উপস্থাপন করে বিচারিকভাবে মুক্তি পাওয়াই শ্রেয়। তিনি তার অপরাধ অস্বীকার করেছেন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু বিচারের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, আদালত দ্রুত এই আপিল শুনানি গ্রহণ করবে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। দলীয় নেতারা মনে করেন, এই মামলায় খালেদা জিয়া অবিচারের শিকার হয়েছেন এবং তার প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক আচরণ করা হয়েছে। তাই এই আপিল শুনানি তার জন্য সুবিচার পাওয়ার সুযোগ এনে দেবে বলে বিএনপি আশাবাদী।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে প্রস্তুত এবং আপিলের মাধ্যমে নিজের নির্দোষ প্রমাণে বদ্ধপরিকর।