রাজনীতি

পঞ্চদশ সংশোধনীর রিটে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪
পঞ্চদশ সংশোধনীর রিটে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রশ্নে করা একটি রিটের শুনানিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত করা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ তার আবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে আদালতে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং তার সহযোগী ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল।
রিট আবেদনে দাবি করা হয়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি করে। বিএনপি মনে করছে, এই সংশোধনী বাতিল না হলে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে আনা পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ করতে বিএনপির মহাসচিব এ রিটে পক্ষভুক্ত হয়েছেন। বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, সুজন কর্তৃক দায়েরকৃত এই রিটে বিএনপি ইন্টারভেনর হিসেবে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সংবিধানের সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারবে।
এ রিটের আবেদনটি জনস্বার্থে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হয়। সংস্থাটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই আবেদন করেন। আবেদনকারী অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে ২০১১ সালে বিভিন্ন বিষয় সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। এছাড়া, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় এবং সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সংযোজন করা হয়।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। এই সংশোধনীর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়, যা বিরোধী দলসহ অনেক মহলের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়েছে। এছাড়া, বিএনপি দাবি করে আসছে যে, এই ব্যবস্থার বাতিলের ফলে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
এই পটভূমিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষভুক্ত হওয়া তার দলের অবস্থান ও সংশোধনী বাতিলের জন্য তাদের দৃঢ়তারই প্রতিফলন। আদালতে রিটটি প্রথমে ১৯ আগস্ট বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের বেঞ্চে শুনানি হয় এবং সেদিন আদালত সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে একটি রুল জারি করেন।
বর্তমানে পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরোধিতাকারী দল ও ব্যক্তিদের দাবি, এই সংশোধনী বহাল থাকলে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হতে পারে।