আন্তর্জাতিক

মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে বাঁচলো দুই বিমান! সাময়িক বরখাস্ত তিন কর্মী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩
মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে বাঁচলো দুই বিমান! সাময়িক বরখাস্ত তিন কর্মী!
গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে কাঠমান্ডুর দিকে আসছিল নেপাল এয়ারলাইন্সের A-320 বিমানটি। ওই একই সময়ে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের দিকে ল্যান্ডিং এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। 

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ১৯ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে নীচে নামছিল। নেপাল এয়ারলাইন্সের বিমানটি প্রায় একই জায়গায় ১৫ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই বিমান দুটি কাছাকাছি চলে আসে এবং দুর্ঘটনা ঘটার অবস্থার সৃষ্টি হয়। 


তবে পাইলটের দক্ষতায় নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও নেপালের “নেপাল এয়ারলাইন্স” এর দুইটি বিমান। 

গত ২৪ শে মার্চ শুক্রবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর আকাশে এই ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যেই এই ঘটনার জেরে ২৬ শে মার্চ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএএন)।

তবে দুই পাইলটের দক্ষতায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান বিমানে থাকা যাত্রীরা। যখন রাডারে দেখা যায় দু’টি বিমান কাছাকাছি চলে এসেছে তখন নেপাল এয়ারলাইন্সের পাইলট তার বিমানটিকে আরও ৭ হাজার ফুট নিচে নামিয়ে ফেলেন। 

কাঠমান্ডু বিমানবন্দর পর্বতে ঘেরা বিমানবন্দরে এত কম উচ্চতায় নেমে যাওয়ায় বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত বলে আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পাইলটের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। 

এই ঘটনায় নেপালের বেসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করার দুই দিন পর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমান চলাচলের বিষয়টি যারা দেখভাল করে, সেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল -এটিসি এর তিন কর্মীর কর্তব্যে গাফিলতি থাকার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছিল।

সংস্থাটির মুখপাত্র জগন্নাথ নিরোউলা ওই তিন কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর কাজে যোগ দিতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

এই ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে এটিসির তরফ ঠেকে গাফিলতি থাকার কথা স্বীকার করা হয়। তবে কেন এত কম ব্যবধানে দুইটি বিমানকে যেতে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। 

নেপালয়ের বিমানবন্দর গুলো ভৌগলিকভাবে এমনিতেই বিপজ্জনক। রানওয়ে ছোট ও বিমানবন্দরগুলো পাহাড়ের আশেপাশে হওয়ায় এমনিতেই পাইলটদের বিশেষ সতর্কতা মেনে বিমান চালাতে হয়। এর পরেও এটিসি ও পাইলটদের miscommunication এর কারণে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। 

নেপালের বিমানবন্দর এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। ২০০০ সাল থেকে এই পর্যন্ত দেশটিতে বিমান দুর্ঘটনায় ৩০৯ জন নিহত হয়েছেন৷  

এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে পোখারা বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের সময় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে ৬৮ জন মারা যান। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়ার কথা ছিল৷ তবে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা যাওয়ায় বিমানটি আগুন ধরে মাটিতে বিধ্বস্ত হয়। 

২০১৮ সালের ১২ই মার্চ বাংলাদেশের US Bangla’র DASH-8 Q400’র একটি ফ্লাইট ত্রিভূবন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর সময় রানওয়ের আশে পাশে বিধ্বস্ত হয়। সে সময়ও এটিসির ভুল তথ্যের কারণে পাইলট বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। পাইলট তখন মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়লে দিকভ্রান্ত হয়ে যান।ঐ পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় ওই দিন এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

 ওই দুর্ঘটনায় দুইজন পাইলট সহ অন্তত ৫১ জন যাত্রী নিহত হন। ওই ফ্লাইটের পাইলট ঠেকে শুরু করে বেশিরভাগ যাত্রীই ছিলেন বাংলাদেশী। 


এছাড়াও ১৯৯২ সালে পাকিস্তান এয়ারলাইনসের একটি বিমান কাঠমান্ডু আসার পথে বিধ্বস্ত হয়ে ১৬৭জন নিহত হয়েছিলেন৷