ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি বরাবরই খোলামেলা কথা বলেন এবং নিজের জীবনকে সকলের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। এমনই এক বক্তব্য দেন তিনি ‘রঙিলা কিতাব’ ওয়েব সিরিজের ট্রেলার প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। অকপটে জানান, তিনি কখনো নিজের কিছু লুকাতে চান না; বরং যা তিনি, তাইই সবাইকে দেখতে দেন। সিরিজটির প্রচারে তিনি বলেন, “নায়িকা–টায়িকা বুঝি না, মানুষ হয়েই চলে যেতে চাই,” যা নিয়ে বিনোদনজগতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পরীমনির এই খোলামেলা স্বভাবের কারণেই সমসাময়িক কিংবা অগ্রজ কোনো নায়িকা এত আলোচনায় ছিলেন কিনা, তা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর জীবনের যেমন আলোচনার উপাদান রয়েছে, ঠিক তেমনি সমালোচনাও কম নেই। কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও প্রায়ই আলোচনায় থাকতে দেখা যায় তাঁকে। তবে এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই বরং নিজের খেয়ালখুশি মতোই চলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কাজের বাইরের ব্যাপারগুলো নিয়ে সাধারণত অন্য অভিনেত্রীরা কথা বলতে পছন্দ না করলেও পরীমনি তাঁর জীবনের প্রতিটি দিককে সবার সামনে উন্মুক্ত রেখেছেন।
আগামী ৮ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে অনম বিশ্বাসের পরিচালিত হইচই অরিজিনাল সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’। এই সিরিজে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি এবং মোস্তাফিজুর নুর ইমরান। সিরিজটির প্রচারের জন্য গতকাল হইচই কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক অনম বিশ্বাস, পরীমনি এবং অন্যান্য অভিনেতা ও কলাকুশলীরা।
এবারই প্রথম ওয়েব সিরিজে কাজ করলেন পরীমনি। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজে কাজ করা নিয়ে তিনি বেশ উৎসাহী ছিলেন। তার ভাষায়, “সুপ্তী চরিত্রটি আমার জীবনের একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল। এই চরিত্রটি করতে না পারলে হয়তো আমি অপূর্ণ থেকে যেতাম।” সিরিজের এই চরিত্রে তিনি একজন মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যা তাঁর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সুপ্তী চরিত্রটি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “শোনেন, আমি ছাড়া সুপ্তী চরিত্রটি হতো না। সুপ্তীকে আমার দরকার ছিল, এটাই আমার মনে হয়েছিল।” সুপ্তী চরিত্রের জন্য কাজ করার মুহূর্তগুলো তিনি বেশ উপভোগ করেছেন এবং এ চরিত্রটি তাঁর জীবনের অনেক শূন্যতা পূরণ করেছে বলেও তিনি জানান।
পরীমনির অভিনয়জীবনের শুরু নাটকের মাধ্যমে হলেও জনপ্রিয়তা পান চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। শাহ আলম মণ্ডলের পরিচালনায় অভিনীত এই ছবিটি দিয়ে ঢালিউডে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি আরও বেশি প্রশংসা কুড়ান। ‘স্বপ্নজাল’-এর মতো গুণগত চলচ্চিত্রে কাজ করার পর থেকেই দর্শকদের কাছে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেন।
‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজটি নিয়ে তার বিশেষ উত্তেজনা রয়েছে এবং তিনি জানিয়েছেন, এই সিরিজটি নিয়ে তাঁর ভক্তদের কাছ থেকে বিশেষ প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আশা করছেন। সিরিজটির নির্মাণে অনম বিশ্বাসের নতুনত্ব, তার চরিত্র এবং সহ-অভিনেতাদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার সময়ও তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “সুপ্তী চরিত্রটি আমার কাছে শুধু অভিনয়ের চেয়ে বেশি কিছু। এই চরিত্রটি করে আমার জীবনের ভেতরে এক ধরনের পরিতৃপ্তি পেয়েছি।”
সিরিজটির চিত্রনাট্য পড়ার পর থেকেই এই কাজটি নিয়ে অনেকটা এক্সাইটেড ছিলেন পরীমনি। বিভিন্ন সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে দেখা গেলেও এই প্রথমবার কোনো ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ভিন্ন একটি ঘরানার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, কাজের বাইরেও এই শিল্পী নিজের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা করেন এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের। তিনি চান সাধারণ মানুষ তাঁর জীবনের প্রতিটি অংশকে যেমন রয়েছে, তেমন করেই দেখুক। এ নিয়ে সমালোচনা বা আলোচনা তাকে দমাতে পারে না বরং তাঁর নিজের মতো চলার এই মানসিকতাই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যরা তার অভিনয়ের প্রতি উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং ওয়েব সিরিজে তাঁর অভিনয়ের জন্য সাফল্য কামনা করেন। পরীমনির ভাষায়, “নায়িকা হয়ে বাঁচার চেয়ে আমি মানুষ হিসেবেই থেকে যেতে চাই। এত আলোচনা-সমালোচনা আমাকে স্পর্শ করে না; আমি যা, তাই সকলের সামনে প্রকাশ করতে ভালোবাসি।”