বিনোদন

ফিলিস্তিনের ১৯টি সিনেমা সরিয়ে দিল নেটফ্লিক্স

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
ফিলিস্তিনের ১৯টি সিনেমা সরিয়ে দিল নেটফ্লিক্স
জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স সম্প্রতি তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৯টি ফিলিস্তিনি সিনেমা সরিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের ৩২টি সিনেমার লাইসেন্স অর্জন করে এই প্ল্যাটফর্ম, যার মধ্যে থেকে এখন ১৯টি সিনেমা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, এবং তারা একে বিদ্বেষমূলক আচরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সান ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক সংস্থা ফ্রিডম ফরওয়ার্ড এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নেটফ্লিক্সের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের মাঝে ক্ষোভের কারণ
ফিলিস্তিনিদের অনেকেই মনে করছেন, ফিলিস্তিনিদের নির্মিত সিনেমাগুলোর মাধ্যমে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং কণ্ঠস্বর উঠে আসে। তাই এই সিনেমাগুলোর সরিয়ে নেওয়া ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি একটি বৈষম্যমূলক আচরণ। বিষয়টি নিয়ে ফ্রিডম ফরওয়ার্ড নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে এবং সেখানে উল্লেখ করে, “ফিলিস্তিনের নির্মাতাদের সিনেমাগুলো যেগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের গল্প তুলে ধরে, কেন সরানো হলো, তার ব্যাখ্যা চাই আমরা।” তাদের মতে, নেটফ্লিক্সের উচিত ছিল ফিলিস্তিনের গল্পগুলো সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।
নেটফ্লিক্সের ব্যাখ্যা
নেটফ্লিক্স তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিনেমাগুলোর লাইসেন্স চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ২০২১ সালে তিন বছরের জন্য এই ফিল্মগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা এগুলো সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তারা সারা বিশ্বের দর্শকদের জন্য বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছে এবং ফিলিস্তিনের সিনেমাগুলোও এর অংশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই ব্যাখ্যা ফিলিস্তিনপন্থী গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
ফ্রিডম ফরওয়ার্ডের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য সংস্থার উদ্বেগ
ফ্রিডম ফরওয়ার্ড সংস্থা বলছে, নেটফ্লিক্সের এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের গল্প বিশ্ব থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা এবং তাদের কণ্ঠস্বর দমন করার একটি পদক্ষেপ। তাদের ভাষায়, “নেটফ্লিক্সকে অবশ্যই ফিলিস্তিনের গল্প বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। তবে নেটফ্লিক্স উল্টো এই কণ্ঠস্বর চেপে ধরার উপক্রম করছে।” এছাড়া, নেটফ্লিক্সের এই পদক্ষেপ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও বিনোদন মাধ্যমগুলোকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রচার করতে সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
বিতর্কিত সিনেমাগুলোর তালিকা
নেটফ্লিক্স থেকে সরিয়ে দেওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে এলিয়া সুলেমানের ‘ডিভাইন ইন্টারভেনশন’, অ্যানেমারি জাসিরের ‘সল্ট অব দ্য সি’, মাই মাসরির ‘৩০০০ নাইটস’-সহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা। ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির মধ্যে এই সিনেমাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসব সিনেমা ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম, দুঃখ, এবং বেঁচে থাকার গল্পগুলোকে তুলে ধরে। তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে নেটফ্লিক্সের এই সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনি সমর্থক গোষ্ঠীগুলো আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সিনেমাগুলোর গুরুত্ব
ফিলিস্তিনি সিনেমাগুলো শুধু বিনোদনের অংশ নয় বরং ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাস, সংগ্রাম, ও আশা-আকাঙ্ক্ষার একটি বিশেষ প্রতিচ্ছবি। ফিলিস্তিনি নির্মাতারা তাদের সিনেমার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং সংগ্রামের সাথে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাগুলোর মাধ্যমে তারা যুদ্ধ, নির্যাতন এবং দুঃখের কাহিনী যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের বেঁচে থাকার শক্তিও ফুটিয়ে তুলেছেন।